
পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হওয়ার প্রধান কারণ
১. স্বার্থপরতা ও সহনশীলতার অভাব
আধুনিক সমাজে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সহনশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বিশেষ করে যখন পরিবারে একাধিক প্রজন্ম থাকে, তখন একে অপরের মতামত ও আগ্রহের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেকেই নিজের সুবিধা ও স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। এই স্বার্থপরতার কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সহনশীলতার অভাব দেখা দেয়। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়, যা ক্রমশ বড় আকার ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত পরিবারের বন্ধন ভেঙে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, পরিবারে সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে দ্বন্দ্ব, গৃহস্থালি কাজে সহযোগিতার অভাব, অথবা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপের কারণে পারিবারিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। এই ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহনশীলতার মনোভাব গড়ে তোলা অপরিহার্য।
২. অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও জীবিকার চ্যালেঞ্জ
অর্থনৈতিক পরিবর্তন পারিবারিক বন্ধন দুর্বল করার একটি অন্যতম কারণ। একসময় বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পরিবারগুলো প্রধানত কৃষি নির্ভর ছিল এবং সবাই একত্রে কাজ করত। এই একত্রে কাজ করার প্রক্রিয়া পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করত। কিন্তু বর্তমানে অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে বেশিরভাগ মানুষ শহরে চাকরি বা ব্যবসা শুরু করেছেন। এমনকি অনেকেই জীবিকার তাগিদে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। এর ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি যদি শহরে বা বিদেশে থাকেন, তবে তিনি পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন না, যা পরিবারের ঐক্যকে দুর্বল করে। এছাড়া, শহরে বসবাসের উচ্চ ব্যয় এবং স্থানের সীমাবদ্ধতার কারণে একান্নবর্তী পরিবার ব্যবস্থা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে, পরিবারের সদস্যরা আলাদা আলাদা জায়গায় বসবাস শুরু করছেন, যা পরিবারের ঐক্যকে আরও ভঙ্গুর করে তুলছে।
৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদি) আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মাধ্যমগুলো যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, তেমনি এটি পারিবারিক সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একক পরিবারে থাকার সুখী জীবনের কথা প্রচারিত হচ্ছে, এবং তরুণ প্রজন্ম বিশেষভাবে এটিকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করছে। তারা মনে করে, স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করা অনেক ভালো এবং পরিবারের থেকে আলাদা থাকলেই সবচেয়ে বেশি সুখী হওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখানো হয় যে, একক পরিবারে বসবাস করলে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বেশি থাকে এবং জীবনযাত্রা আরও উন্নত হয়। কিন্তু বাস্তবে এটি সবসময় সত্য নয়। বরং এই ধরনের বিচ্ছিন্নতা মানসিক ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যায়। ফলে, পারিবারিক সম্পর্কগুলো শক্তিশালী না হয়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করার কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মুখোমুখি যোগাযোগ কমে যাচ্ছে, যা সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করছে।
৪. বিয়ের পর সম্পর্কের টানাপোড়েন
বিয়ের পর অনেক ক্ষেত্রে দম্পতিরা একান্নবর্তী পরিবারে থাকার ব্যাপারে বিরোধী হয়ে ওঠেন। তারা মনে করেন, একত্রে বসবাস করলে তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে এবং তারা নিজেদের জীবনযাপনে পূর্ণ স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবে না। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের দম্পতিরা একক পরিবারে থাকার প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এর ফলে, পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন বা সহযোগিতা করার মানসিকতা কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, অনেক সময় শ্বশুর-শাশুড়ি বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে দম্পতিরা আলাদা হয়ে যান। এই বিচ্ছিন্নতা শুধুমাত্র একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে দেয় না, বরং দম্পতিদের মধ্যেও মনোমালিন্য ও সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। এছাড়া, একক পরিবারে থাকার ফলে দম্পতিরা পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেন, যা দীর্ঘমেয়াদে তাদের মানসিক ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৫. পশ্চিমা একক পরিবার ব্যবস্থার নেতিবাচক প্রভাব
পশ্চিমা দেশগুলোতে একক পরিবার ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে প্রচলিত হলেও, এই ব্যবস্থার অনেক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে, যা বাংলাদেশেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের সমাজে একক পরিবার ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, কিন্তু এটি আমাদের ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, একক পরিবার ব্যবস্থায় প্রবীণদের প্রতি অবহেলা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে বৃদ্ধ বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর প্রচলন রয়েছে, এবং এই প্রবণতা বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া, একক পরিবারে বসবাসের কারণে দাম্পত্য সম্পর্কগুলো তাড়াতাড়ি ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, কারণ সেখানে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহানুভূতির অভাব থাকে। এই ব্যবস্থা মানসিক চাপ, হতাশা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি করছে, যা আমাদের সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
৬. নারীর ভূমিকায় পরিবর্তন ও মানসিকতার পার্থক্য
নারীদের ভূমিকা সমাজে দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং বেশিরভাগ নারী এখন কর্মজীবী হয়ে উঠছেন। এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন হলেও, এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। কর্মজীবী নারীরা মনে করেন, একক পরিবারে বসবাস করা তাদের স্বাধীনতা ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ভালো। তারা একান্নবর্তী পরিবারে থাকলে গৃহস্থালি কাজের অতিরিক্ত চাপ এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবন ব্যাহত হতে পারে। এই মানসিকতার কারণে অনেক সময় তারা একান্নবর্তী পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। উদাহরণস্বরূপ, একজন কর্মজীবী নারী যদি তার শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকতে না চান, তবে এটি পরিবারের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, নারীদের আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধির ফলে তারা পারিবারিক বাধ্যবাধকতাগুলোকে অনেক সময় উপেক্ষা করেন, যা পরিবারে যোগাযোগের দুর্বলতা সৃষ্টি করে।
৭. ইগো সমস্যা ও বোঝাপড়ার অভাব
বর্তমানে অনেক পরিবারে সদস্যদের মধ্যে অহংকার বা ইগো সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মতামতকে সবার ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দিতে চান এবং অন্যদের মতামত শ্রদ্ধা করার ক্ষেত্রে অবহেলা করেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি পরিবারে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সবাই নিজের মতামতকে সঠিক বলে মনে করেন এবং অন্যের মতামতকে গুরুত্ব না দেন, তবে এটি দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। এই সমস্যা পারিবারিক বন্ধনকে দুর্বল করে দেয় এবং অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম এবং পুরোনো প্রজন্মের মধ্যে মতবিরোধ এই ইগো সমস্যার একটি বড় কারণ।
৮. প্রবীণদের প্রতি অবহেলা
আজকাল প্রবীণ সদস্যদের প্রতি আগের মতো যত্ন নেওয়া হয় না। তাদের শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষা প্রায়শই অবহেলা করা হয়। অনেক বৃদ্ধ বাবা-মা একাকীত্বে ভুগছেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় যত্ন তারা পাচ্ছেন না। উদাহরণস্বরূপ, অনেক পরিবারে দেখা যায়, সন্তানরা শহরে বা বিদেশে থাকেন এবং তাদের বাবা-মা গ্রামে একা থাকেন। এই পরিস্থিতিতে প্রবীণরা শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েন। এছাড়া, একক পরিবারে থাকার ফলে প্রবীণদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়, যা পারিবারিক বন্ধনকে চূর্ণ করে দেয়।
সমাধান ও করণীয়
পারিবারিক বন্ধন ভাঙনের সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। নিম্নে কিছু কার্যকর সমাধান উল্লেখ করা হলো:
১. পারিবারিক মূল্যবোধ চর্চা করা
পারিবারিক ঐক্য বজায় রাখতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহানুভূতি এবং ভালোবাসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের ছোট সদস্যদের ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক ঐক্যের গুরুত্ব শেখানো উচিত। উদাহরণস্বরূপ, শিশুদের শেখানো যেতে পারে যে, পরিবারের সকল সদস্যের সঙ্গে শ্রদ্ধার সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং তাদের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব রাখতে হবে। এছাড়া, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যা আমাদের সমাজে পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এবং এই শিক্ষাগুলো আমাদের জীবনে প্রয়োগ করা উচিত।
২. সহনশীলতা ও বোঝাপড়া বৃদ্ধি করা
পারিবারিক বন্ধন বজায় রাখার জন্য সহনশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও, একে অপরের মতামত শ্রদ্ধা করে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান খোঁজা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, যদি পরিবারে কোনো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়, তবে সবাইকে একত্রে বসে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে এবং একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি করতে নিয়মিত সময় একসঙ্গে কাটানো উচিত। যেমন, সপ্তাহে একদিন পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাবার খেতে পারেন বা কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন। এটি সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে।
৩. সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব থেকে দূরে থাকা
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব কমানো উচিত। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং সম্পর্কের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখানো আদর্শ জীবনের সঙ্গে নিজের জীবনের তুলনা করার ফলে হতাশা তৈরি হয়, যা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি করে। তাই পরিবারে সবাইকে একে অপরের প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং ভার্চুয়াল দুনিয়ার চেয়ে বাস্তব দুনিয়ায় সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে বসে গল্প করার সময় মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহার না করার নিয়ম করতে পারেন।
৪. প্রবীণদের প্রতি যত্নশীল হওয়া
পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের প্রতি যত্ন নেওয়া এবং তাদের সম্মান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা এবং তাদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রবীণদের সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটানো, তাদের সমস্যার কথা শোনা এবং তাদের প্রয়োজনীয় যত্ন নেওয়া উচিত। এছাড়া, প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, কারণ তারা পরিবারের সদস্যদের জন্য মূল্যবান সম্পদ। প্রবীণদের প্রতি যত্নশীল হওয়া শুধুমাত্র পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী করবে না, বরং সমাজে একটি ইতিবাচক বার্তাও দেবে।
৫. পারিবারিক সম্পদের সঠিক বণ্টন করা
পরিবারে সম্পদের সঠিক বণ্টন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে যায়। তাই সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বজায় রাখা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, সম্পত্তি বণ্টনের সময় সবাইকে একত্রে বসে আলোচনা করতে হবে এবং সবার মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া, ধর্মীয় নিয়মকানুন এবং আইন মেনে সম্পত্তি বণ্টন করা উচিত। এটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কমাবে এবং সবার মধ্যে একতা বজায় রাখবে।
৬. পারিবারিক সময় বৃদ্ধি করা
পারিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে নিয়মিত পারিবারিক সময় কাটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, সপ্তাহে একটি দিন পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাবার খেতে পারেন, কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন, অথবা একসঙ্গে কোনো খেলাধুলা বা বিনোদনের আয়োজন করতে পারেন। এটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মুখোমুখি যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে এবং সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে।
৭. পেশাদার সহায়তা গ্রহণ
যদি পরিবারে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়, যেমন দীর্ঘমেয়াদি মনোমালিন্য বা সম্পর্কের অবনতি, তবে পেশাদার সহায়তা গ্রহণ করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, পরিবারের সদস্যরা কাউন্সেলিং বা মিডিয়েশন সেবা নিতে পারেন। এটি পারিবারিক সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতে পারে এবং সম্পর্কের মধ্যে স্বচ্ছতা ও বোঝাপড়া ফিরিয়ে আনতে পারে।
৮. শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি
সমাজে পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে শিক্ষার ভূমিকা অপরিহার্য। স্কুল ও কলেজে পারিবারিক মূল্যবোধ এবং সম্পর্কের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া উচিত। এছাড়া, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সমাজকল্যাণ সংস্থা এবং সরকারি উদ্যোগে পারিবারিক ঐক্যের গুরুত্ব নিয়ে বিভিন্ন কর্মশালা ও প্রচারণার আয়োজন করা যেতে পারে।
পারিবারিক বন্ধন আমাদের সমাজের মূল শক্তি। এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনে সুখ ও শান্তি নিয়ে আসে না, বরং সমাজের সামগ্রিক উন্নতিতেও ভূমিকা রাখে। আধুনিক জীবনযাত্রার চ্যালেঞ্জ এবং সামাজিক পরিবর্তনের কারণে পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়লেও, সঠিক পদক্ষেপ ও সচেতনতার মাধ্যমে এই বন্ধনকে শক্তিশালী করা সম্ভব। আমাদের সবাইকে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে পারিবারিক ঐক্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী হলে আমাদের সমাজও শক্তিশালী ও সুন্দর হবে।
Labels : #Social ,